ঢাকা, ২৪ অক্টোবর, ২০২২ (বাসস) : সম্ভাব্য বৈশ্বিক খাদ্য সংকট মোকাবেলায় বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সমতাধর্মী অর্থনীতি ও সমবায়ী গ্রাম গড়ে তোলার বিকল্প নেই। এজন্য কৃষি সাংবাদিকতার বিকাশ প্রয়োজন।
রোববার রাতে বাংলাদেশ নর্থ আমেরিকান জার্নালিস্টস নেটওয়ার্ক আয়োজিত “সম্ভাব্য বৈশ্বিক খাদ্য সংকট : বাংলাদেশ প্রেক্ষিত ও কৃষি সাংবাদিকতার ভূমিকা” শীর্ষক এক ভার্চুয়াল আলোচনায় বক্তারা একথা বলেন।
বক্তারা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর মৃত্যুর কিছুকাল পূর্বে বাংলাদেশে সমতাধর্মী সমবায়ী গ্রাম গড়ে তুলার স্বপ্ন দেখেছিলেন। গ্রামের মানুষকে সংঘবদ্ধ করে, নিজেদের সমস্যা নিজেরা সমাধানের জন্য সম্মিলিত উদ্যোগ নেয়ার প্রচেষ্টাও শুরু করেছিলেন। বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের কৃষি সমস্যাগুলির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার পাশাপাশি অতীত, বর্তমান এবং অদূর ভবিষ্যতের সমস্যাগুলির মধ্যে ভারসাম্য আনতে বাংলাদেশে কৃষি সাংবাদিকতার উপর জোর দিতে হবে। সম্ভাব্য বৈশ্বিক খাদ্য সংকটকে সামনে রেখে বাংলাদেশের লক্ষ্য হবে ক্ষুধার মাঝারি স্তর থেকে দেশকে ক্ষুধার নিম্নস্তরে নামিয়ে আনতে সহায়তা করা এবং এ লক্ষ্যকে অর্জন করতে দেশে কৃষি সাংবাদিকতার বিকাশ করা।
তারা বলেন, ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান কর্মকান্ড এবং জীবনীশক্তি হলো কৃষি । বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধত্তোর অবস্থা থেকে প্রতিটি সঙ্কট মোকাবেলায় কৃষি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দেশে উৎপাদনশীলতা, আয় বৃদ্ধি এবং গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তা ও প্রতিনিয়তই উপলব্ধ হচ্ছে । দেশের বর্তমান জনশক্তির ৫০ ভাগ যেখানে কৃষিতে নিয়োজিত সেখানে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল কৃষিকে সর্বক্ষেত্রে দাবিয়ে রেখেছে।
জনসংখ্যা বৃদ্ধি, কৃষি জমির ক্ষতি, লবণাক্ততা, খরা, বন্যার মতো সমস্যার মুখোমুখি হওয়া, জলোচ্ছ্বাস, শিলাবৃষ্টি, কুয়াশা, শৈত্যপ্রবাহ ও নানাহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলের ক্ষতি, ভালো মানের বীজ, সার, এবং সেচের অভাব, টেকসই কৃষি গড়ে তোলার উপর আলোকপাত করে ভার্চুয়াল আলোচনায় বক্তব্য রাখেন, নেটওয়ার্কের নির্বাহীবৃন্দ যুক্তরাষ্ট্র থেকে সহসভাপতি নজরুল ইসলাম বাবুল ও বাংলাদেশ থেকে খায়রুল আহসান মানিক, সাধারণ সম্পাদক মো. ফিরোজ মিয়া, যুগ্ম সম্পাদক এ এস এম শামসুল হাবিব, কোষাধ্যক্ষ মো: সাজ্জাদ হোসান, এসরার জাহিদ খসরু ও কানাডা থেকে সাইফুর হাসান। এতে সভাপতিত্ব করেন কানাডা প্রবাসী গবেষক, লেখক ও সাংবাদিক বীর মুক্তিযোদ্বা দেলোয়ার জাহিদ।
বক্তারা বলেন, দেশের আসন্ন এ সঙ্কটে উৎপাদন ও বাণিজ্য বাড়াতে সহায়তা, স্বচ্ছতার উন্নয়ন, উদ্ভাবন এবং যৌথ পরিকল্পনা নিশ্চিত এবং খাদ্যব্যবস্থার রূপান্তরে বিনিয়োগ বাড়ানোর কৌশল নেয়া দরকার। রাশিয়া -ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্বব্যাপী অস্থিরতা, খাদ্যের উৎপাদন হ্রাস, পরিবহণ ব্যবস্থায় বিঘ্নসহ নানা কারণে আগামীতে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট আরও তীব্র তীব্র থেকে তীব্রতর হওয়ার আশংকা রয়েছে ।
তারা বলেন, কোভিড ১৯ পরিস্থিতির মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্ভাব্য বৈশ্বিক খাদ্য সংকট নিয়ে দেশবাসীকে প্রস্তুত করার জন্য যে আগাম বার্তা দিয়েছেন, এর আলোকে কাজ করতে হবে। ফসলি জমি রক্ষা, কৃষি তথ্য বিষয়ে গণমাধ্যমে নিয়মিত সচেতনতামূলক বিজ্ঞাপন ও সংবাদপত্রে কৃষি পাতা রাখতে হবে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে।
সভাপতি দেলোয়ার জাহিদ বলেন, আয়ারল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা “কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড” ও জার্মানির “ওয়েল্ট হাঙ্গার হিলফ” যৌথভাবে প্রকাশিত জিএইচআই-২০২২ অনুযায়ী, বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থানের কিছুটা অবনমন হলেও, আশার কথা হলো তালিকায় পাকিস্তান, ভারত ও আফগাস্তিানের অবস্থান বিশ্বের ১২১টি দেশের মধ্যে যথাক্রমে ৯৯, ১০৭ ও ১০৯তম। সে তুলনায় বাংলাদেশ কিছু ভালো অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের অবস্থান এখন ৮৪তম।