জার্মান ফ্রাইবুর্গ-এর ইউনিভার্সিটি অব এডুকেশন থেকে স্পেনের ইউনিভার্সিটি অব ভিগো এবং কানাডার ইউনিভার্সিটি অব ম্যানিটোবায় লেখকের শিখন ও গবেষণাকালীন সময় সাংবাদিকতায় ইউরোপীয়ানদের কৌতূহলের বিষয়গুলোকে উপলব্ধি করেন। বাংলাদেশের সাংবাদিকতার বিষয়ে বিস্ময়ের অভিজ্ঞতায় স্পষ্টতঃই ফুটে উঠে লিঙ্গ, শিক্ষা, বয়স, বসবাসের এলাকা এবং জাতি/জাতিগততার প্রতি তাদের কৌতুহল, ফুটে উঠে শ্রেণি ও পেশার মানুষের জীবন, জীবিকার প্রতি তাদের আগ্রহ ও অনুভূতির বিষয়গুলো। জীবন ভিত্তিক গল্প পড়ার লোকেরা যেন সংযুক্ততা এবং বিশালতার অভিজ্ঞতা লাভ করে লেখক ও বাংলাদেশের সাংবাদিকতা থেকে। সাংবাদিকতা এমন একটি পেশা যার মধ্যে একটি নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা, তারপর প্রিন্ট, ডিজিটাল বা সম্প্রচার মিডিয়ার মাধ্যমে বৃহত্তর দর্শকদের কাছে তা পৌঁছে দেয়াকে বুঝি আমরা।
সাংবাদিকতার সাধারণ ধরনগুলোর মধ্যে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা, ওয়াচডগ সাংবাদিকতা, মতামত সাংবাদিকতা, সম্প্রচার সাংবাদিকতা, ক্রীড়া সাংবাদিকতা, সম্প্রচার সাংবাদিকতা, বাণিজ্য সাংবাদিকতা, বিনোদন সাংবাদিকতা ও অনলাইন সাংবাদিকতা এমনিতর ভাবে রয়েছে নানাহ শ্রেণীভাগ। বাংলাদেশের যোগাযোগের একটি বিশেষ ক্ষেত্র হওয়ার দাবিদার এ “কৃষি সাংবাদিকতা”, উন্নত বিশ্বে যা এখন বেশ চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেহেতু খাদ্য ব্যবস্থা সম্পর্কে সংবাদ এবং তথ্য রিপোর্ট করার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে “কৃষি সাংবাদিকতা”।
স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের কৃষি মানুষের জীবন, জীবিকা, কর্মসংস্থান এর সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত ছিল, এখনো আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে. দেশের জিডিপিতে এর অবদান ছিল প্রায় ৬০ শতাংশ। কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত, যা জাতীয় জিডিপিতে বর্তমানে ১৯.৬ শতাংশ অবদান রাখে এবং জনসংখ্যার প্রায় ৬৩ শতাংশের জন্য কর্মসংস্থান প্রদান করে।
সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলতেন, কৃষি খাতের সঙ্গে নিয়োজিত সেবা ও শিল্পসহ এতে জিডিপির অবদান প্রায় ৪০ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের মতে, বাংলাদেশে মোট আবাদি জমির পরিমাণ মোট জমির ৬১.২ শতাংশ (১৯৮০ সালে ৬৮.৩ শতাংশ থেকে কমে)। কৃষি খাতে কর্মসংস্থানের প্রধান উৎস হিসাবে এখনো শীর্ষে রয়ে গেছে। জমির মালিকানা এবং উত্তরাধিকার বিধির কারণে চাষ যোগ্য জমির পরিমান ছোট থেকে ছোট হচ্ছে। ব্যাপকভাবে জনসংখ্যা বেড়ে চলেছে। দেশে ৩টি প্রধান ফসল— চাল, পাট এবং চা; যা কয়েক দশক ধরে কৃষি রপ্তানিতে আধিপত্য তৈরি করছে। পাট এবং চা দেশের প্রধান রপ্তানি আয়কারী। দেশীয় বাজারের জন্য কৃষকরা আখ, তামাক, তুলা এবং বিভিন্ন ফল-ফলাদি ও শাকসবজি এবং আলু, মিষ্টি আলু, কলা, আনারস উত্পাদন করে। মাছচাষ দেশের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কার্যকলাপ, যা জিডিপিতে প্রায় ৬ শতাংশ অবদান রাখে। অবদান রাখে, গ্রীষ্মমন্ডলীয় রেইনফরেস্ট ও বনায়ন। বিল্ডিং উপকরণের উত্স হিসাবে নির্মাণ শিল্প এতে ব্যবহৃত হয় কাঠ, ব্যবহৃত হয় কাগজ তৈরির উপকরণের উত্স হিসাবে এবং কৃষি খাতে জ্বালানী কাঠের উত্স হিসাবে।
কোভিড-১৯ অতিমারীর সময়ে, বাংলাদেশের জনগণ ও রাষ্ট্রকে স্বতন্ত্র একটি খাত হিসেবে নিরলসভাবে সহায়তা করেছে কৃষি। বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে একটি হলো বাংলাদেশ। দেশের অর্থনীতি বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে পালাক্রমে এগুচ্ছে, একীভূত হচ্ছে।
“দীর্ঘস্থায়ী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং চলমান কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে বাংলাদেশ যাতে কখনোই দুর্ভিক্ষ ও খাদ্যের অপ্রতুলতার মতো কোনো পরিস্থিতির মুখোমুখি না হয় সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের মাটি ও মানুষ আছে। তাই এখন থেকেই আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে, বাংলাদেশ যাতে কখনো দুর্ভিক্ষ বা খাদ্য সংকটে না পড়ে। আমরা আমাদের খাদ্য উৎপাদন বাড়াব।” প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪২৫ ও ১৪২৬’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন। (বাসস/ঢাকা, ১২ অক্টোবর ২০২২)
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ সতর্কবার্তা বাংলাদেশে কৃষি সাংবাদিকতার গুরুত্বকে উপলব্ধি করায় চিন্তার খোরাক যোগাবে। কৃষির সাথে জড়িতদের জন্য প্রাসঙ্গিক রিপোর্ট করেন বা লেখেন কৃষি সাংবাদিকরা কিন্তু গল্পগুলি অ-কৃষি পাঠকদের ও দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
কৃষি সাংবাদিকরা ওয়েব ও প্রিন্ট মিডিয়ায় নিবন্ধ তৈরি করেন যা কৃষির বর্তমান প্রবণতাকে রিপোর্ট করে এবং গল্পের তথ্য, উৎসগুলি গবেষণা ও যাচাই করে। কৃষি সংবাদ; কৃষি বাজার; বীজ, সরঞ্জাম, রসায়ন বা চাষ পদ্ধতিতে নতুন প্রযুক্তি; রোগ বা খাদ্যজনিত প্যাথোজেন প্রাদুর্ভাব; মেলা এবং এক্সপোজ; শ্রম; সরকারি প্রবিধান; প্রশিক্ষণ; আবহাওয়া; এবং আরও শিক্ষার সুযোগ কৃষি সাংবাদিকদের থাকা উচিত। দেশের সামাজিক চ্যানেলগুলিতে ট্র্যাফিক তৈরি করতে গল্পগুলিকে পুশ করতে পারেন কৃষি সাংবাদিকেরা। এ বিষয়ে কিছু সুপারিশমালা বিবেচনায় রাখা যায়।
যেমন: কৃষির বর্তমান প্রবণতা রিপোর্ট, ওয়েব ও প্রিন্ট নিবন্ধন পরিকল্পনা ও উৎপাদন, নিবন্ধগুলি জন্য নতুন ব্যবসার উৎসগুলোর বিকাশ, প্রয়োজনে বিশেষ প্রতিবেদন তৈরি, প্রকাশনার জন্য সম্পাদকীয় ক্যালেন্ডার, গল্পের জন্য ডেটা বেস এবং উৎস গুলি গবেষণা এবং যাচাই, নির্ভুলতার জন্য প্রুফ রিড উপাদান, যার সঠিকতা এবং উপযুক্ততার জন্য বিশেষজ্ঞদের সাথে পরামর্শ।
বাংলাদেশে পল্লী উন্নয়ণ ও অর্থনৈতিক ভাবনার সূতিকাগার হলো বার্ড,-বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি। কৃষি সাংবাদিকতার ধারণাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তা হতে পারে একটি নির্ভরযোগ্য সহযোগী প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি ( বার্ড)- এর প্রতিষ্ঠাতা প্রধান নির্বাহী এবং কুমিল্লা পদ্ধতির উদ্ভাবক ড. আখতার হামিদ খান-এর ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী(০৯ অক্টোবর, ১৯৯৯) উদযাপিত হলো গত ১১ অক্টোবর ২০২২ একটি উন্মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে এ সভায় মুখ্য আলোচক হিসেবে ড. মো. কামরুল হাসান “ড. আখতার হামিদ খান: উন্নয়ন দর্শন ও প্রায়োগিক গবেষনা ’’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ তিনি পরিবেশন করেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বার্ড (বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি)এর সম্মানিত মহাপরিচালক এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অতিরিক্ত সচিব জনাব মোঃ শাহজাহান। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বার্ডের পরিচালক (প্রশাসন) জনাব মিলন কান্তি ভট্টাচার্য্য। সভায় আমন্ত্রিত অতিথি, চলমান কোর্সের প্রশিক্ষণার্থীগণ, বার্ডের অনুষদবর্গসহ সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ এবং বার্ড মডেল স্কুলের শিক্ষকমণ্ডলী অংশগ্রহণ করেন। উপস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন জনাব শাহরিয়ার আহমেদ, সহকারী পরিচালক, বার্ড।
কুমিল্লা পদ্ধতির উদ্ভাবক ড. আখতার হামিদ খানের কর্ম-গবেষণার তাত্বিক ও ব্যবহারিক নীতি, কৌশল ও প্রেক্ষাপট আজো গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাসঙ্গিক। যা অনুসন্ধানের চারপাশে জ্ঞান তৈরি অন্যতম বিষয় ও দিকনির্দেশনা প্রদান করে। অ্যাকশন রিসার্চ ব্যক্তিগত বা পেশাগতভাবে কৃষি সাংবাদিকদের বিকাশের উদ্দেশ্যে তাদের কর্মের মাধ্যমে শিখতে সুযোগ সৃষ্টি করবে। দেশের অর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির বাস্তবতায় পেশা হিসেবে কৃষি সাংবাদিকদের গড়ে তুলতে বাংলাদেশ নর্থ আমেরিকান জার্নালিস্টস নেটওয়ার্ক এর উদ্যোগকে বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড)- সহযোগিতার হাত বাড়াবে তা খুবই প্রত্যাশিত বিষয়। বার্ডের বর্তমান সুযোগ্য নেতৃত্ব অতীত পরিস্থিতির উপর যেন অন্তর্দৃষ্টি দেয়, বর্তমানের পাশাপাশি সামনের পরিস্থিতিকে মোকাবেলার জন্য।
বাংলাদেশে কৃষি সাংবাদিকতার ধারাবাহিকতার এ ধাপে সরকার, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিভাগ সহ সকল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও পেশাজীবীরা এগিয়ে আসা প্রয়োজন , প্রয়োজন নিবন্ধের বিশালতার দিক নয় বরং বাস্তবতাকে উপলব্ধি করা।